মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস পেয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর তদানীন্তন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ কর্তৃক খালাসের রায়ের অনুলিপি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হচ্ছে। ফলে বুধবার (২৭ মে) সকালে তিনি মুক্তি পাচ্ছেন।
ঢাকা বিভাগের কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন্স) মো. জাহাঙ্গীর কবির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, এ টি এম আজহারুল ইসলামের খালাসের কাগজপত্র কারাগারে দেরিতে পৌঁছেছে। যাচাই-বাছাই করে খালাসের নথি কারাগার থেকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিরাপত্তা প্রসঙ্গও রয়েছে। সঙ্গত কারণে আজ রাতে নয়, বুধবার(২৮ মে) সকালে মুক্তি পাচ্ছেন তিনি।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বুধবার (২৮ মে) সকাল সাড়ে ৯টায় তদানীন্তন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেল থেকে মুক্তি পাবেন বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।
দলটির কেন্দ্রীয় মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের প্রধান ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের জানান, এ উপলক্ষ্যে মজলুম এটিএম আজহারুল ইসলামকে সকাল সাড়ে ৯টায় আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভ্যর্থনা জানাবে দলটি।
এর আগে মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এ টি এম আজহারুল ইসলামের আপিল মঞ্জুর করে খালাসের রায় দেন। রায়ে সর্বোচ্চ আদালত ২০১৪ সালে এ টি এম আজহারের বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায় ও মৃত্যুদণ্ড বাতিল ঘোষণা করেছেন। এ ছাড়া অন্য কোনো মামলা না থাকলে তাকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে আসামিপক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক ও আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম। এর আগে ৬ মে প্রথম দিনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম মাছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল, নির্বাহী পরিষদ সদস্য আবদুল হালিম, মোবারক হোসাইন, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি দেলোয়ার হোসেন সাঈদীসহ আরও অনেকে।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রংপুর অঞ্চলে গণহত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, আটক, নির্যাতন, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগসহ নয় ধরনের ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল এ টি এম আজহারের বিরুদ্ধে।
২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তার বিরুদ্ধে দুই, তিন ও চার নম্বর অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়। পাঁচ নম্বর অভিযোগে ২৫ বছর এবং ছয় নম্বর অভিযোগে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানি শেষে ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় ঘোষণা করে। আপিল বিভাগের রায়ে দুই, তিন, চার (সংখ্যাগরিষ্ঠ মত), এবং ছয় নম্বর অভিযোগের দণ্ড বহাল রাখা হয়, আর পাঁচ নম্বর অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়।
ওই দিন আসামিপক্ষে ছিলেন প্রয়াত জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রয়াত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। ২০২০ সালের ১৫ মার্চ আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। এরপর ২০২০ সালের ১৯ জুলাই এ টি এম আজহারুল ইসলাম আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদন করেন। ২৩ পৃষ্ঠার আবেদনে তিনি মোট ১৪টি যুক্তি উপস্থাপন করেন।
পুনর্বিবেচনার শুনানি শেষে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে তার আপিলের অনুমতি দেয়। এরপর তিনি আপিল করেন।
খুলনা গেজেট/এইচ